জীবন বড় জটিল। রোজকার ডাল-ভাতে হাসির মুহূর্তগুলো যেন তিরামিসুর মতো। যা এক্কেবারে মিস করা ঠিক নয়। এই মন্ত্র মাথা রেখেই তৈরি হয়েছে ‘বুমেরাং’। ছবিতে সায়েন্স আছে, সুপারবাইক আছে, হিউম্যানয়েড রোবট আছে-তবে এই সব কিছু ছাপিয়ে আছে মজার সংলাপ, সিচুয়েশনাল কমেডি আর জিৎ-রুক্মিণীর জমজমাট জুটি।
টেকনোলজি কখনও ইমোশনকে চাপা দিয়ে দেয়নি। আর এটাই এই ছবির সব থেকে বড় প্লাস পয়েন্ট। এই ছবিতে জিৎ আছেন সমর নামের এক সায়েন্টিস্টের ভূমিকায়। যে তৈরি করেছে হিউম্যানয়েড রোবট নিশাকে। এই নিশার চেহারা আবার সমরের স্ত্রী ইশার (রুক্মিণী মৈত্র) মতো। নিশা আর ইশাকে ঘিরে তৈরি হয় নানা কনফিউশন। চিনের দুষ্টু লোকের ভূমিকায় আছেন খরাজ মুখোপাধ্যায়।
যে চায় রোবট তৈরির টেকনিক চুরি করতে। সমরের বিরক্তিকর শ্বশুরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রজতাভ দত্ত। সে আবার চাকরিরত জামাই পছন্দ করে। রেস্তরাঁর চেন রয়েছে তার। জামাই ব্যবসা সামলালেও সে খুশি। কিন্তু গবেষক জামাই তার একেবারে অপছন্দের। সমরের স্যাটেলাইট অয়নের ভূমিকায় আছেন সৌরভ দাস। সে প্রেম করে টিনার (দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায়) সঙ্গে। কিন্তু নিশা-ইশার জটিলতায় তার প্রেম ভাঙার পথে। আর আছে এক চরিত্রহীন প্রতিবেশী (অম্বরীশ ভট্টাচার্য) আর গোয়েন্দা কাজের লোক (আয়েষা ভট্টাচার্য)।
মোটামুটি এরকম ঘুঁটি সাজিয়ে গল্প নিয়ে এগিয়েছেন পরিচালক সৌভিক কুণ্ডু। আর ঘুঁটিগুলো যে তিনি একেবারে ঠিকঠাক চেলেছেন, তা ছবি দেখেই স্পষ্ট বোঝা যায়। আদতে গল্প ভালো হলে সেটা নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ থাকে। ‘বুমেরাং’-এর গল্পটা সেরকমই। সুন্দর, সরল, মজার। ছবির দৃশ্যগুলো মন খুলে হাসার জন্য একেবারে আদর্শ।
‘বুমেরাং’ জিতের থেকেও বেশি রুক্মিণীর ছবি। অভিনয়ের প্রসঙ্গ উঠলে নায়িকার প্রশংসাই আগে করতে হয়। তিনি মন দিয়ে অভিনয় করেছেন। মানুষ-রোবট দু’টো চরিত্র দেখে মজা পাওয়া যতটা সহজ, অভিনয় করা ততটাই কঠিন, তা স্পষ্ট। কিন্তু এই কঠিন দায়িত্বটা সুন্দর করে সামলেছেন রুক্মিণী। ছবিতে তাঁকে দেখতে কেমন লাগছে (অবশ্যই ভালো লেগেছে) তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে নায়িকার অভিনয়।
তাই কখনও রুক্মিণীর নায়িকা থেকে অভিনেত্রী হয়ে ওঠার জার্নির কথা বলতে হলে ‘বুমেরাং’-এর নাম থাকবে। জিৎ রয়েছেন স্বমহিমায়। এই ছবিটায় এমন একটা চরিত্র বেছেছেন তিনি, যা সাধারণ বাঙালির মনে ধরবেই। প্রত্যেক ছবিতেই তাঁকে দেখতে দারুণ লাগে। তবুও জিতের ক্যারিশ্মার কথা বলতে গেলে তাঁর স্ক্রিন প্রেজেন্সের প্রসঙ্গ টানতেই হয়। এই ছবিতে তিনি এত ধরনের চশমা পরেছেন, আর তাতে এত ভালো লেগেছে নায়ককে যে কখন মন ‘দিল ডোলা রে ডোলা’ গেয়ে উঠবে, বুঝতেও পারবেন না।
নিজের চরিত্রটাকে বেশি প্রাধান্য না দিয়ে তিনি বারবার বল বাড়িয়ে দিয়েছেন নায়িকার দিকে। কারণ তিনি জানতেন রুক্মিণী গোল করলে আখেরে টিমই জিতবে। তাঁদের অফ-স্ক্রিন বন্ধুত্বটা ভালো তা বেশ বোঝা যায় অন-স্ক্রিন কেমিস্ট্র দেখে। সৌরভ ভালো অভিনেতা। ছবিতেও সেই ছাপ রেখেছেন। তুলনায় খরাজ মুখোপাধ্যায় আর রজতাভ দত্তের চরিত্র দু’টো বেশ একপেশে। অভিনেতারা চাইলেও খুব বেশি অন্যরকম কিছু করে দেখানোর সুযোগ ছিল না। পাশাপাশি এটাও ঠিক ভালো অভিনেতারা যে কোনও চরিত্রই উতরে দেন।
এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ছোট্ট একটা চরিত্রে বিশ্বনাথ বসুর অভিনয় ভালো লাগে। অম্বরীশ ভট্টাচার্যকেও ভালো লেগেছে ছবিতে। বিশেষ করে অম্বরীশ আর রুক্মিণীর দৃশ্যগুলো ভীষণ মজার। সিনেমার গানগুলো শুনতে ভালো লাগে। তবে সিনেমা হল থেকে বেরনোর পর টাইটেল ট্র্যাক ছাড়া কোনওটাই মনে থাকে না।
ছবিতে সংলাপ খুব বুদ্ধি করে ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে রাজনৈতিক সুড়সুড়ি আছে, সারকাজ়ম আছে কিন্তু কোনও তিক্ততা নেই। ইডি, গরু পাচার, মা-মাটি-মানুষ-সব কিছুই আছে। কিন্তু সেগুলোর প্রয়োগে বুদ্ধির ছাপ স্পষ্ট। জোর করে হাসানোর চেষ্টা করা হয়নি কখনও। সংলাপ, অভিনয় আর পরিস্থিতি এমন হাসির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যা মন খুলে হাসতে বাধ্য করবে দর্শকদের। আর সেই আপ্তবাক্য তো সবারই জানা, ‘হাসি তো ফাসি’। – এই সময়