ওপার বাংলা মেয়ে, বিপদ বুঝতে পেরে একদিন বিয়ের পিঁড়ি থেকে পালিয়ে এপার বাংলায় চলে এসেছিল ময়না। এক বনেদি বাড়ির গিন্নির হাত ধরে এই বাংলায় আশ্রয় পায় পূর্ব বাংলার ‘ময়না’। ঘটনাচক্রে বাড়ির ছেলে ‘রোদ্দুর’ বিয়ে করতে গিয়ে লগ্নভ্রষ্ট হতেই তাঁর সঙ্গেই একপ্রকার জোর করেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হল ময়নার। কিন্তু তারপর? দুই বাংলাকে এক সূত্রে বেঁধে এমনই এক গল্প নিয়ে শুরু হয়েছে জি বাংলার ধারাবাহিক ‘পুবের ময়না’। যে চরিত্রে অভিনয় করছেন অভিনেত্রী ঐশানী দে।
সম্প্রতি হিন্দুস্তান টাইমসের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের সিরিয়াল ‘পুবের ময়না’ সহ নানান টুকিটাকি বিষয়ে কথা বললেন ঐশানী।
কেমন লাগছে এই ‘পুবের ময়না’ সিরিয়ালে কাজ করতে?
ঐশানী: এখন ভীষণই মজা করে শ্যুট করছি। এই একটু আগেই শ্যুট থেকে বাড়ি ফিরলাম (যখন কথা হচ্ছিল, তখন বাজে সন্ধে সাড়ে ৮টা)। এই কয়েকদিনে ওখানে সকলের সঙ্গে সুন্দরভাবে মিশে গিয়েছি। সকলের সঙ্গেই একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। শ্যুটিংয়ের ফাঁকে আমরা কিন্তু ভীষণ মজা করি। সবথেকে বড় কথা, আমার এই ‘ময়না’ চরিত্রটা ভীষণ পছন্দ হয়েছে।
‘পুবের ময়না’ সিরিয়ালটা দুই বাংলাকে জুড়ে দিয়েছে! কী বলবেন?
ঐশানী: এক্কেবারেই তাই। এটা দুই দেশ, দুই বাংলাকে জুড়ে একটা গল্প। আমার মনে হয়না যে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা সিরিয়ালে এধরনের গল্পের আধারে কোনও কাজ হয়েছ! এই গল্পটা বা ‘ময়না’ চরিত্রটাও একঘেয়ে নয়। ময়না ভীষণই উচ্চাকাঙ্খী একটা চরিত্র। ময়নার মধ্যে একটা জেদ আছে, যে ওর যেটা পাওয়ার সেটা ওকে অর্জন করতেই হবে, সেই সঙ্গে ভীষণই প্রাণোজ্জ্বল একটা চরিত্র এটা। তাই আমার মনে হয় দর্শকদের এই চরিত্র, এই গল্পটা ভালোলাগবে। পুবের ময়নার গল্পের সঙ্গে দর্শকরা নিজেদের কানেক্ট করতে পারবেন।
‘ময়না’কে তো বাঙাল ভাষায় কথা বলতে হচ্ছে, তাতে কি আপনি স্বাচ্ছন্দ্য?
ঐশানী: নাহ। এই অ্যাকসেন্টের জন্যই আমার একটু অসুবিধা হচ্ছে। তবে এবিষয়ে আমাকে ওখানে সকলেই হেল্প করছেন। যাঁরা ওখানে রয়েছেন, তাঁরা সকলেই ভীষণ ‘হেল্পফুল’, আর তাই আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। নায়ক গৌরব রায় চৌধুরী আমাকে এবিষয়ে সাহায্য করছেন, কারণ, উনি নিজে বরিশালের।
যখন অডিশন হয়েছিল, আমি চিত্রনাট্য় দেখে তখন ভেবেছিলাম, এটা কী! তারপর শিখতে শিখতে কাজ করছি। এখনও শিখছি। ভাষার জন্য আমার ওপার বাংলার পুরনো কিছু সিনেমা দেখেছি বেশকিছু, কিছু বইও পড়েছি। সেইভাবেই উচ্চারণ করার চেষ্টা করছি, যাতে চরিত্রটা অনেক বেশি বাস্তব মনে হয়
‘ময়না’র ঐশানী তো বাস্তবে ছাত্রী তাই তো?
ঐশানী: হ্যাঁ, আমি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী, বিডি মেমোরিয়াল স্কুলে (কামালগাছি) পড়ি। পরের বছর বোর্ডের পরীক্ষা। তাই অভিনয় পড়াশোনা দুটোই আমাকে ব্যালেন্স করে চলতে হচ্ছে। এটা একটু তো কঠিন বটেই। তবে মজাও লাগছে।
পড়াশোনা কখন করেন?
ঐশানী: শ্যুটিং থেকে বাড়ি ফিরে পড়তে বসি। কিছুদিন আগে বিষয়টা একটু চাপের হয়ে উঠেছিল। কারণ, তখন আমার পরীক্ষা চলছিল। আর রাতে শ্যুটিং হচ্ছিল। সেট থেকে ফিরে রাতে পড়ছিলাম, আর ঘুমোতাম না। তারপর সকালে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলাম। তাছাড়া যখনই সময় পাই পড়ে নি। শ্যুটিংয়েও বই নিয়ে যাই। পড়াশোনা তো করতেই হবে।
আর বোর্ডের পরীক্ষার সময় কী হবে?
ঐশানী: আমার পরীক্ষা থাকলে ওরা ডেট অ্যাডজাস্ট করে দেয়। যাঁদের সঙ্গে কাজ করছি সকলেই খুব হেল্পফুল। এবিষয়ে আমি কৃতজ্ঞ। বোর্ডের পরীক্ষার সময়েও সেভাবেই করব। তাছাড়া এখন থেকেই আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি বোর্ডের পরীক্ষা জন্য। আমি পড়াশোনা, অভিনয় কোনওটাই মিস করতে চাই না।
টিভির পর্দায় প্রথম কবে এসেছিলেন?
ঐশানী: আমি এর আগে সিরিয়াল ৪ বছর আগে করেছি। ‘সিংঘলগ্না’ করেছিলাম, তারও আগে ‘নটী বিনোদিনী’ করি। তারপর সিনেমাতে কাজ করেছি। ‘ট্যাংরা ব্লুজ’, ‘মুখোশ’, ‘হৃদপিণ্ড’, ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গ রহস্য’-এর ছবিতে কাজ করেছি, খুব শীঘ্রই যে ছবিটা মুক্তি পাবে ‘পদাতিক’, ওই ছবিতেও আমি আছি। আর জি বাংল অরিজিনালসের দুটো ছবিতেও কাজ করেছি।
অভিনয়ের হাতেখড়ি কীভাবে?
ঐশানী: আমি কখনও ভাবিইনি যে অভিনয় করব। আমি গান করতাম। সেই সূত্রেই থিয়েটারের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয়। থিয়েটার করতে করতেই আমি এই অভিনয়টাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়তাম। তারপর সেই চর্চা ধরে রাখতেই পাকাপাকিভাবে অভিনয়ে এসে পড়েছি।
আমার বাড়িতে কিন্তু আমিই প্রথম অভিনয়ে এসেছি। তারপর আমার দেখে আমার মাও টুকটাক থিয়েটার করতে শুরু করেন।
পড়াশোনা, গান ছাড়া আর কী ভালোবাসেন?
ঐশানী: আমি আঁকতেও খুব ভালোবাসি। বই পড়তে ভালোবাসে। বই-এর অনেক কালেকশন আছে। পড়াশোনা করতে ভালো লাগে, এবিষয়ে কিন্তু আমি সিরিয়াস।
বাড়ি থেকে সাপোর্ট পাচ্ছেন?
ঐশানী: ভীষণ। আমার বাড়ি খুব সাপোর্টিভ। বাবা-মা সাপোর্ট না করলে এতকিছু একসঙ্গে করতে পারতাম না। আমার মা যখন আমার সঙ্গে থাকেন, তখন বাকি কাজ বাবা সামলে নেন। আবার বাড়ির লোকজন সবসময় আমাকে সাহায্য করেন। আমি সত্যিই ভাগ্যবান, যে বাবা-মা এত্ত ভালো! আমি ওদের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতে পারি। বাবা-মা ছাড়াও বাড়িতে আমার একটা ভাই আছে, আর একটা ছোট্ট পোষ্য।
‘পুবের ময়না’তে ময়নার চরিত্রটা একজন অল্পবয়সী মেয়ের। এরপর সিরিয়ালের গল্প এগোনোর সঙ্গে যদি ময়নার বয়স যখন বাড়ে, সেক্ষেত্রে কি ঐশানীই করবেন, নাকি ‘ময়না’ বদলে যেতে পারে?
ঐশানী: হ্য়াঁ, এই চরিত্রটি আমিই করব। এখানে ময়নার বর্তমানের প্রেক্ষিতে গল্পটা এগোচ্ছে। কোনও ফ্ল্যাশব্যাক বা অন্যকিছু নেই। তাই চরিত্রটা যেভাবে এগোবে, তাতে আমিই অভিনয় করব। এখানে ময়নাও ছাত্রী, আমিও। ময়না এখানে ডাক্তার হতে চায়। ও ঢাকায় গিয়ে পড়াশোনা করবে, তারপর অনেককিছু ঘটবে, তবে সেটা তো বলা যাবে না… (হাসি)।